ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আগামী ২৮ মে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন কে ঘিরে রয়েছে নানামূখী উত্তেজনা। দীর্ঘদিন বিএনপিকে অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে থেকে জাতীয় প্রোগ্রাম ও অন্যান্য কর্মসূচী পালন করতে হয়েছে।
পৌর নির্বাচনের কারণে ঝিনাইদহ শহরে সম্মেলনের অনুমতি না মিললেও শহর থেকে প্রায় ১৬কি.মি. দুরে আঃ রউফ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন সফল করতে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের এইচএসএস সড়কের দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা বিএনপি এই সম্মেলন উপলক্ষে সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।
এতে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খাঁন শিমুল, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এসএম মসিয়ূর রহমান, সদস্য সচিব এমএ মজিদসহ জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা, আগামী ২৮ মে জেলা বিএনপি’র সম্মেলন সফল করতে সকলকে আহবান জানান। সেই সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ ৩১ বছর পর ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে নতুন মুখ এ্যাড. এম এ মজিদ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছে । এর আগে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ২৮ বছর দলের সভাপতি ছিলেন ঝিনাইদহ-২ আসন সাবেক বিএনপি দলীয় সাংসদ মসিউর রহমান। এরপর ২০১৯ সালের ২০ আগষ্ট পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এসএম মশিউরকে আহবায়ক ও এমএ মজিদকে সদস্য সচিব করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মসিউর রহমানের ছোট ভাই এম এ মজিদ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। আসছে জেলা কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব । আহবায়ক কমিটি থাকা অবস্থায় স্থানীয় রাজনীতিতে মসিউর রহমান কিছুটা কর্তৃত্ব খাটানোর চেষ্ট করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি গঠনের সাথে সাথে সেটাও হারাবেন মসিউর রহমান । দলীয় সুত্রে জানা যায় আগামী ২৮মে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য দলীয় মনোনায়ন সংগ্রহের সময় ছিল ২৩ মে রাত ৮ টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ মজিদ ছাড়া আর কেউ মনোনায়ন পত্র সংগ্রহ না করায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে ১৫ বছর পরে সাধারণ সম্পাদক পদেও আসছে পরিবর্তন।
২০০৭ ও ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে নির্বাচিত সাবেক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালেক ওই পদে আর ফিরছেন না। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনায়ন সংগ্রহ করেছেন বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও পৌর কমিটির সাবেক সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, থানা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু , পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ এবং আহবায়ক কমিটির সদস্য ও থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম। অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক জেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক কমিটির সদস্য আসিফ ইকবাল মাখন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাজেদুর রহমান পাপ্পু, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন মনোনায়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে এর মধ্যে আসিফ ইকবাল মাখন ও প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন। দলীয় সুত্রে জানা গেছে জেলা সম্মেলনে এই তিনটি পদে নির্বাচন হবে এবং বাকি পদগুলিতে পরে সমাঝোতার ভিক্তিতে প্রদান করা হবে। ২০০৭ ও ২০১৬ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলনে মসিউর রহমান ও আব্দুল মালেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এটা ছিল বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন।
এর পর ঘরোয়া ভাবে ২০১৯ সালের ২০ আগষ্ট এস এম মশিউর রহমানকে আহবায়ক এবং এ্যাড. এম এ মজিদকে সদস্য সচিব করে আহবায়ক কমিটি গঠন করে। এর আগে ২০১৮ সালে মসিউর রহমান দুদকের দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদন্ডা প্রাপ্ত হন এবং কারাগারে আটক ছিলেন। পরে আপিলে জামিন পান। মূলত ১০ বছরের সাজার আদেশ পাওয়ার পর থেকে মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অবস্থানের ধস নামে। পরবর্তীতে সাজা প্রাপ্ত হওয়ায় ২০১৮ সালে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হন তার চাচাতো ভাই ও নবনির্বাচিত জেলা সভাপতি এ্যড. এম এ মজিদ। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার কারনে আইনি জটিলতায় এম এ মজিদের মনোনায়ন বাতিল হয়ে যায়।
এর আগে দলীয় মনোনায়ন না পাওয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মসিউর রহমানের পুত্র ডাঃ ঈব্রাহীম রহমান মনোনায়ন জমা দেন। আর তখন থেকেই মুলত দুই ভাইয়ের মধ্যে অধিপত্যের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।
আহবায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে মসিউর রহমান জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নিয়ন্ত্রন করতে থাকে এবং তার বেশ কিছু অনুসারী নিয়ে দলের কর্মসুচী আলাদা ভাবে পালন করে আসছিলেন। অন্যদিকে এমএ মজিদের নেতৃত্বে বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সু সংঘঠিত হতে থাকে। জাতীয দিবস গুলিতে বিশাল মিছিল করে মজিদ প্রমান করেন তার নেতৃত্বে দল সংগঠিত এবং শক্ত অবস্থানে আছে। এই অবস্থায় এম এ মজিদ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সভাপতি নির্বাচিত হতে চলেছেন। দলীয় নেতা- কর্মীদের চাওয়া দলীয় স্বার্থে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের পর মসিউর রহমান ও এমএ মজিদের মাঝে সৃষ্ট সম্পর্কের দুরত্ব কমিয়ে এক কাতারে রাজনীতি করবেন। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড.এমএ মজিদ বলেন, আমি বিএনপি করি এবং দলের সিদ্ধান্তে কাজ করি । সেই ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রেশারেশির কোন সুযোগ নেই । জেলা কমিটি গঠনে যদি কারো চাওয়া-পাওয়া থাকে সেটা সাধ্যের মধ্যে রেখে সকলকে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার মানুষিকতা তিনি পোষণ করেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান বলেন গাছের পুরানো পাতা ঝরে গিয়ে যেমন নতুন পাতা গজায় তেমনি দলের প্রয়োজনে প্রবীনদের সরে গিয়ে তরুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে এটাই নিয়ম। তিনি বলেন জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসাবে তিনি বিএনপি করেন। যতদিন বিএনপি আছে ততদিন তিনিও আছেন। তার সাথে কারো কোন দ্ব›দ্ব নেই । যখন দলের কর্মসুচিতে তাকে ডাকা হয় তখন তিনি সেখানে উপস্থিত হন। জেলা সম্মেলনেও তিনি থাকবেন। এর আগেও দলীয় কর্মসুচিতে সবার মাঝে উপস্থিত ছিলেন।