• শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

হরিনাকুণ্ডুতে ঘরে ঘরে বড়ি তৈরির উৎসব

রাব্বুল হুসাইন- হরিনাকুণ্ডু প্রতিনিধি / ১৬৪ Time View
আপডেট টাইম : সোমবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২২

ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার গ্রামের নারী পুরুষ এখন মহাব্যস্ত ডালের তৈরি মুখরোচক সুস্বাদু খাদ্য কুমড়ো বড়ি বানাতে। বাঙালির নানা রকম খাবারের মধ্যে জনপ্রিয় একটি খাদ্য হলো কুমড়ার বড়ি।

শীতকালে গ্রামের নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই বড়ি তৈরিতে। ভোরে উঠে কেউ ছুটছেন ঢেঁকির কাছে,কেউ শীলপাটা,আবার কেউবা মাটির পাত্রে ঘোটনার কাছে। সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের বড়ি তৈরির রাঙা উৎসব। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পাড়া মহল্লার গৃহিণীরা একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে তৈরি এ মজাদার খাবার তৈরিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। জানা গেছে, মাষকলাই ভিজিয়ে সেই ডালের সঙ্গে পাকা চালকুমড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ সুস্বাদু বড়ি। শীতের সময় গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলা বড়ি তৈরি করার কাজটি করে থাকেন।

কলেজ পড়ুয়া নওশিন মেহবুব ঝিনাইদহের কন্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিভাবে কুচি করে রাখতে হয়। এরপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। অন্যদিকে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় এবং ঢেঁকিতে কুটে নিতে হয়।এরপর বাটা ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হয়। যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়, ততক্ষণ খুব ভালো করে হাত দিয়ে এ মিশ্রণ মিশাতে হয়। এরপর কড়া রোদে পাটি বা কাপড় বিছিয়ে হাতের কৌশলে বড়ির ছোট ছোট আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বড়ি বসিয়ে শুকাতে হয়। এভাবে বড়ি তিন থেকে চার দিন রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

বড়ি হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ মাংসের সমান। প্রতি বছর শীত এলে এ শ্রেণির পরিবারে অন্য কিছু না হলেও বড়ি হতে হবে। কেননা তারা যে কোন মূল্যে শীতের পুরো সময়টা থেমে থেমে বড়ি তৈরি করেন। হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামের শাপলা খাতুন জানান। হরিনাকুণ্ডু উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের গৃহবধূ রাজিয়া খাতুন জানান, শীত এলেই তাদের গ্রাম অঞ্চলের লোকজন বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পাড়ার অনেক পরিবার একত্রিত হয়ে তারা বড়ি বানান। ধনী-গরিব সবাই এ বড়ির প্রতি দুর্বল। কেননা বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পিঁয়াজ, রসুন,কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। এছাড়া বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।

একই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলী বলেন, বাজারের সাদা বড়িগুলো বেশিরভাগই ভালো হয় না। বিক্রেতারা কুমড়ার পরিবর্তে পেঁপে আর আটা মিশিয়ে থাকে। এজন্য আমি প্রতিবছর ডাল আর কুমড়া কিনে বাড়িতে বড়ি তৈরি করি। এ বছর আমি কুমড়া কিনেছি পাঁচটা, ২০০ টাকায় আর কলাইয়ের ডাল কিনেছি ৫০০ টাকার। এতে ৩০০-৪৫০টি কুমড়ো বড়ি পাব। তা দিয়ে যা বড়ি হবে, পুরো শীতকাল খেতে পারব। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনদেরও দিতে হয়।বাড়িতে বানানো বড়ি বাজারের গুলোর চাইতে অধিক স্বাদের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Ads 1