হরিনাকুণ্ডুতে সন্ধ্যারাত থেকে হঠাৎ মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ফসলসহ কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরও দেখা যায়,দমকা হাওয়ায় উড়ে গেছে দরিদ্র মানুষের টিন। উপজেলার প্রকৃতির এই বৈরী আবহাওয়ায় ঝড়ে শত শত কলা গাছ সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার ভেড়াখালী,শিতলী,সোনাতনপুর,জোড়াদহ,হরিশপুর,হরিয়ারঘাট,নারায়নকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের অসংখ্য কলাগাছ ভেঙ্গে গেছে বলে জানা যায়।বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের,গ্রামের মাঠ পরিদর্শন করে দানবীয় ঝড়ের এই তান্ডব লক্ষ করা যায়।জানা যায়,বৃহস্পতিবার (২৪ফেব্রুয়ারি) রাতে এই উপজেলার উপর দিয়ে ঝড় বৃষ্টি বয়ে যায়। এতে করে আশে পাশের কয়েকটি অঞ্চল জুড়ে বাতাসের তীব্র গতিবেগের কারণে মাঠের কলাগাছ রাতেই আধারে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।এছাড়াও বেশ কিছু পান বরজ,টিনের চালা উড়ে গেছে।
এদিকে হরিয়ারঘাট গ্রামের ইছাহক আলীর ছেলে কৃষক রিপন আলী ঝিনাইদহের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানান,আমি পশ্চিম আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০১৪ সালের ব্যাচ ছিলাম। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া করে বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরবো কিন্তু অভাবের কারণে আমার লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সংসারের হাল ধরতেই নেমে পড়লাম কৃষি কাজে।আমার ৬০ শতক জমিতে প্রায় ৪৫০ টি কলাগাছ ছিলো।এই ঝড়ে আমার স্বপ্নের কলা বাগান দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বসতবাড়ি অক্ষত থাকলেও আমার কলাগাছ ভেঙ্গে যাওয়ার আমি এখন নিঃস্ব। আমি কলা চাষ করতে গিয়ে আনুমানিক ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। যদি ঝড়ে ভেঙ্গে না যেতো তাহলে আমি,প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি টাকার কলা বিক্রি করতে পারতাম। তিনি আরও বলেন,আমি ধার দেনা,গরু,ছাগল বিক্রি করে কলার আবাদ শুরু করেছিলাম। আজ আমি পথের ফকির হয়ে গেলাম। আমি সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
এদিকে সোনাতনপুর গ্রামের কলা চাষি ফারুক হোসেন জানান,আমার ১২ বিঘা জমিতে কলাগাছ ছিলো।বাগানের ৩ ভাগ গাছ দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে হেলে পড়েছে। আমি প্রতি বছরেই এই ধরনের ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এদিকে ঝিনাইদহ সদরের সাগান্না ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের কলাচাষী ফারুক হোসেন জানান,আমি অনেক দিন যাবৎ কলার চাষ করি।প্রতি বছর দশ বারো বিঘা কলার চাষ করি তবে আজ অবদি পরপর তিন বছর ঝড়ে কলা গাছ ভেঙ্গে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।যথারিতি এবারও ৩ হাজার ৫০০শত কলাগাছ ছিলো তার মধ্যে ২৯০০ চাপা কলা আর ৬০০ শত বগুড়া শবরী কলা গাছ। এরমধ্যে চাপা কলাগাছ প্রায় সবই ভেঙে গেছে আর বগুড়া শবরী গাছ ঠিক আছে। এক বছরের ফসলতো এজন্য খরচ বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১১ বিঘা জমির কলা ঠিকমত বিক্রি করা গেলে আট থেকে দশ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান,ইতিমধ্যে আমরা খোঁজখবর নিয়েছি।তেমন কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই।আমাদের কাছেতো সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করার মতো অর্থ থাকে না। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। আমাদের কাছে একটা খসড়া তালিকা আছে যাদের ক্ষতি হয়েছে অথবা একদম পুরা ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তেমন তথ্য না থাকায় চুড়ান্ত তালিকা করা সম্ভব হয় নি। তবে যাদের বেশী ক্ষতি হয়েছে, তারা যদি ভবিষ্যতে প্রদর্শণী প্লট করতে রাজী থাকেন,তাহলে আমরা তাদেরকে দিয়ে কলার প্রদর্শণী করাতে পারবো।