ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কালী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ৩জনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত দিনার বিশ্বাসকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে ছেলে দিনার বিশ্বাসকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পিতা মতিয়ার রহমান বিশ্বাস।জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর মতিয়ার রহমানের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিনার বিশ্বাসের মূল পরিকল্পনায় উপজেলার ডাউটিয়া গ্রামের শতবর্ষী কালীমন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করা হয়।এঘটনায় মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ঘটনার তদন্ত করে ৩ জনকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু মুল পরিকল্পনাকারী অভিযুক্ত দিনার বিশ্বাস পালিয়ে যায়।এদিকে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত ও পুলিশকে বেকায়দায় ফেলতে বিতর্কিত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন দিনার বিশ্বাসের পিতা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস।
এরই জেরে বুধবার নামসর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠনকে ডেকে আনেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস। এরপর তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য ও উস্কানি ছড়ায়। এতে করে আতংক বিরাজ করছে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান সময় হিন্দুদের উপর হামলা ও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা স্পর্শকাতর বিষয়। অথচ দিনারের পিতা মতিয়ার রহমান বিশ্বাস ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে নানা কৌশল খাটাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ পিতা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় তার ছেলেকে গ্রেফতারে গড়িমসি রয়েছে। অন্যদিকে একের পর এক মতিয়ার রহমান বিশ্বাসও তার ছেলে দিনার বিশ্বাসের অপকর্ম ফাঁস হলেও দল থেকে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস জানান,একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমাকে ও আমার ছেলেকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আমার ছেলে মূর্তি ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ তাকে হয়রানী করতেই ফাসিয়ে দিচ্ছে। এবিষয়ে শৈলকূপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান,এঘটনাকে পুজি করে একটা মহল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গুজব ছড়াচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,মূর্তি ভাঙচুরের মুল পরিকল্পনাকারী দিনার বিশ্বাসকে আটক করার জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে গত রবিবার পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান বিপিএম পিপিএম(বার) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ৬ অক্টোবর শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস ও জিনারুল নামের একজন গড়াই নদীতে নৌকায় ১৫/১৬ জন মেয়েকে নিয়ে অশ্লীল নাচ ও জুয়া খেলার আয়োজন করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জাম, সাউন্ডবক্সসহ ২টি ট্রলার জব্দ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিনার বিশ্বাস। পুলিশকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা করে কালিপ্রতিমা ভাঙচুরের। ওই দিন রাতে দিনার বিশ্বাস তার বাড়িতে আসাদুজ্জামান হিরো,তুষার হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেনকে ডেকে নেয়। সেখানে বসেই পরিকল্পনা করে দিনার।
দিনারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশকে শায়েস্তা করতে ডাউটিয়া গ্রামের শত বছরের পুরনো কালি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে তারা। ভাঙচুর করে কালি প্রতিমার মাথা প্রায় ২০০ গজ দূরে ফেলে রেখে যায়। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করে।পুলিশ সুপার বলেন,ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এর সাথে যেই জড়িত থাকবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।