• শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৮:১৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের একমাত্র শিশু হাসপাতালটি ল্যাবরোটরি বিহীন,সেবা দিতে অপারক

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঝিনাইদহ / ৬৬ Time View
আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

বাংলাদেশের একমাত্র শিশু হাসপাতালটি ল্যাবরোটরি বিহীন,সেবা দিতে অপারক

ঝিনাইদহে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের একমাত্র ২৫ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি এখন ঢাল তলোয়ার না থাকা নিধিরাম সর্দ্দারের মতো। হাসপাতালে না আছে জনবল, না আছে শিশুদের পরীক্ষা নিরিক্ষা করার যন্ত্রপাতি। নানা সংকটে হাসপাতালটি এখন নিজেই অসহায় রোগীর মত। নয়নাভিরাম পরিপাটি সুরম্য ভবনটি কেবল শিশু হাসপাতালের নাম পরিচয় নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে ১৬ বছর। ফলে শিশু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পেলেও পরীক্ষা নিরিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনবল নিয়োগ না করায় সুরম্য স্টাফ কোয়াটারগুলো খালি পড়ে আছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ১৫ বছর আগে দেওয়া শিশু হাসপাতালের ৩ কোটি টাকা মুল্যমানের যন্ত্রপাতির কোন হদিস নেই। সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে। কিছু পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে,বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী এই শিশু হাসপাতালটি ঝিনাইদহে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর গত ৯ জানুয়ারি শিশু হাসপাতালটি যন্ত্রপাতি,ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়ে চালু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম (সাবেক স্বাস্থ্য সচিব) ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানাসহ ঝিনাইদহের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অথচ উদ্বোধনের ৬ মাস পার হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি ডাক্তারসহ অন্যান্য শূন্য পদে। পরীক্ষা নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকায় ল্যাবরোটরি ফাঁকা পড়ে আছে। জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি চেয়ে ৭ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর। কোন উত্তর আসেনি। সর্বশেষ ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে গত ১১ মার্চ ৫২৩ নং স্মারকে জনবল নিয়োগ ও একই তারিখে ৫২১ নং স্মারকে যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্মে আটকে আছে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের ভবিষ্যত। ওই চিঠি সুত্রে জানা গেছে, সরকারী শিশু হাসপাতালটিতে একমাত্র নার্স ব্যতিত অধিকাংশ পদ শুন্য। চিকিৎসকের ৫টি পদের মধ্যে স্থায়ী নিয়োগ আছে মাত্র একজন চিকিৎসকের। অফিসিয়াল কাজের জন্য ৫ জন স্টাফের মধ্যে একজনও নেই। এছাড়া ওয়ার্ডবয়, আয়া, কুক, মশালচি, মালি, ঝাড়–দার ও সুইপার পদে কোন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুইজন কনসালটেন্ট’র মধ্যে আছেন একজন। দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল কাজ করার জন্য কোন লোক নেই। নেই কম্পিউটার ও প্রিন্টার। অনেকটা হাওলাদ ও চেয়েচিন্তে সরকারী শিশু হাসপাতালের কাজ পরিচালিত হচ্ছে বলে স্টাফরা জানান। হাসানুজ্জামান নামে এক শিশু রোগীর অভিভাবক জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মোটামুটি ভালো। ওয়ার্ডের পরিবেশ চমৎকার। এখান থেকে ফ্রি ওষুধও দেওয়া হয়। কিন্তু খাওয়া ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন সিস্টেম নেই। শিশু হাসপাতালটি শহর থেকে অনেক দুরে হওয়ায় বাইরে থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বেগ পেতে হয়। বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আলী হাসান ফরিদ (জামিল) জানান, শিশু রোগীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে তাদের পরীক্ষা নিরিক্ষা। হাসপাতালে কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় শিশুদের দুর দুরান্ত থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ একটি করে ফটোথেরাপি, ইনকিউবেটার, নেবুলাইজার, এক্্েররে ও সাকার মেশিন হলে আপাতত চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হতো। তিনি বলেন নিজেদের টাকায় একটি কম্পিউটার ও প্রিন্ট মেশিন কেনা হয়েছে। ৮ জন সেচ্ছাসেবির বেতন দিচ্ছেন ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও জাহেদী ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালে ১৫টি স্টিলের আলমিরা, ৭টি ফাইল কেবিনেট, ৩৪টি লোহার র‌্যাক, ৭০টি চেয়ার ও ৩৬টি ফুল সেক্রেটারিয়েট টেবিল থাকলেও পড়ে থেকে সেগুলো বেশির ভাগ ব্যবহারের অযোগ্য। তবে ঘষে মেজে কাজ চালানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, করোনা মহামারির কারণে সব কিছু পিছিয়ে যাচ্ছে। ১০ দিনের কাজ এখন এক বছরেও হচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত করোনা নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা শিশু হাসপাতালটির পুর্নাঙ্গতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আশা করা যায় জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট দুর হবে। ওই হাসপাতালের নার্স ও সেচ্ছাসেবীরা জানান, জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে ডাঃ আলী হাসান ফরিদ (জামিল) দায়িত্ব গ্রহনের পর সরকারী শিশু হাসপাতালটির ক্রমাগত শোভা বর্ধন করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত জমিতে ফুল বাগান, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ লাগানো হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল চত্বর দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। মুলভবন ও স্টাফ কোয়ার্টার সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে লোক নিয়োগ করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Ads 1