ঝিনাইদহ ডাকবাংলা বাজারে চুরির অপবাদে শ্রমিক নির্যাতন। অভিযোগ সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।
চাল চুরির অভিযোগ এনে এক শ্রমিককে অটো মিলের মধ্যে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩ নং সাগান্না ইউনিয়নের ডাকবাংলা বাজারে অবস্থিত ইফাদ অটো মিলের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম মতিয়ার হোসেন (৩৫) । তিনি ডাকবাংলা এলাকার মাগুরাপাড়ার ইবাদত হোসেন (৬৫) এর ছেলে।
ভুক্তভোগীর পিতা অভিযোগ করেন, সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এর ছেলে ইফাদ তার ছেলেকে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টার সময় অটো মিলে কাজ দেওয়ার কথা বলে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। কিছু সময় পর তিনি খবর পান তার ছেলেকে অটো মিলের অফিসে আটকে রেখে মারধোর করা হচ্ছে। মারধোরের সংবাদ পেয়ে তিনি তার ছেলেকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কিন্তু তাকে তার ছেলের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। তিনি অটো মিলের অফিসের বাইরে অবস্থানকালে ছেলের চিৎকার শুনতে পান। তার উপস্থিতি টের পেয়ে অফিসের মধ্যে থাকা লাঠিসোঁটা,রড, প্লাস, হাতুড়ি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।
পরবর্তীতে আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় তিনি তার ছেলেকে উদ্ধার করেন এবং দেখেন তার ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে চাল চুরির মিথ্যা অভিযোগে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ছেলে ও সাথে থাকা আরও ৪-৫ জন মিলে হাতুড়ি ও রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিচার করা হোক। কিন্তু আমার নিরপরাধ স্বামীকে এভাবে কাজ দেওয়ার নাম করে ফোন দিয়ে ডেকে মারপিট করায় আমি এই চেয়ারম্যান ও তার ছেলের বিচার চাই।”
ডাকবাংলা চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন ভান্ডারী সাংবাদিকদের জানান, ইফতারের পর তারাবিহ নামাজ শেষে চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় জানতে পারেন ইফাদ অটো মিলের মধ্যে চাল চুরিকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সে সময় তিনি তার সাথে থাকা ডাকবাংলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সহ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অটোমিলের মধ্যে যান এবং চাল চুরির অভিযোগে মতিয়ার নামে ঐ শ্রমিককে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি চাল চুরি করেই থাকে তবে তার জন্য প্রশাসন আছে কিন্তু রোজাদার ব্যক্তিকে এভাবে মারধোর করা ঠিক হয়নি।
নির্যাতনের স্বীকার ভুক্তভোগী মতিয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন , ইফাদ অটো মিলে কাজ দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এর নির্দেশে তার ছেলে ইফাদ ও মাসুদ সহ আরও ৪-৫ জন মিলে ৪ ঘন্টাব্যাপী ধরে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। তিনি কান্নারত অবস্থায় আরও বলেন, “চাল চুরির অভিযোগ সত্য নয়, আমি চাল চুরি করিনি। আমি সারাদিন রোজায় ছিলাম। চাল চুরির অভিযোগ এনে আমাকে যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই”।
নির্যাতনের বিষয়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন এমনকি মারধরের পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের সামনে কোন বক্তব্য দিতে ও রাজী হননি।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা: লিমন পারভেজ জানান,
মতিয়ার নামে যে রোগী ভর্তি হয়েছে তার ডান হাত ও বাম হাত সহ পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, এ বিষয়ে রাতেই ঝিনাইদহ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে।