ঝিনাইদহের আলহাজ্ব মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনায় অটোপাস করা শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দিতে দুর্নীতি করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রীদের। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ,ভর্তি হওয়ার সময় বাধ্যতামূলক জমা নেওয়া এসএসসির মার্কসিট ও প্রবেশপত্র এখন ফেরত নিতে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে ৩০০ টাকা করে দাবি করছে। ২০২০ সালে ১৪১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফর্ম পূরণ করে। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে শিক্ষা বোর্ড থেকে অটোপাস দিয়ে দেয় সকল শিক্ষার্থীদের।কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলেও বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে কেন্দ্র ফিস বাবদ টাকা কর্তন করে রাখছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এই বছর গান্না বাজারের মুদি দোকানদার আনছার আলী’র মেয়ে আসিয়া খাতুন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফর্ম পূরণ করে। সেও অন্যান্যদের মতো অটোপাস করেছে। তার রোল নং ১০৭৪৪৬। যশোর বোর্ড থেকে তার মোবাইল নাম্বারে এসএমএস পাঠানো হয় ৩০ জুন ২০২১ বুধবার রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে। সেই এসএমএস’এ বলা হয় কলেজ থেকে ১০৬৫ টাকা ফেরত নিতে। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী অনামিকা বিশ্বাস। তার রোল নম্বর ২২৮১৪৫। সে মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল। ফর্ম পূরণের সময় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৩২০০ করে টাকা নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৩০ জুন রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটে অনামিকা বিশ্বাসের মোবাইলেও এসএমএস আসে যশোর বোর্ড থেকে। তাকেও ৭৩৫ টাকা ফেরত নিতে বলে কলেজ থেকে।
এই ব্যাচের পরীক্ষার্থী ইমন,সজিব,শাহানুর,শারমিন,সীমা,নদী,রিয়া,অনিক,রাজন,শাহান,সুমাইয়া,রাফিজা,ইমরান,মুন্না,মামুনসহ সকল অটোপাস করা শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত নিতে আসে। ফেরত নিতে যায় এসএসসির মূল মার্কসিট ও প্রবেশপত্র। সেখানেও কলেজের কিলার্ক রমজান আলী ৩০০ টাকা করে দাবি করেন। আসিয়া খাতুনের বড় ভাই মাহফুজ জানায়,তার বোনকে ১০৬৫ টাকার জায়গায় ৪৮০ টাকা দেওয়া হয়েছে এবং অনামিকা বিশ্বাসকে ৪২০ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সেন্টার খরচ বাবদ বাকী টাকা কর্তন করা হয়েছে বলে তাদেরকে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে কলেজের কিলার্ক রমজান আলী জানান, টাকা ফেরত দিচ্ছে প্রিন্সিপাল ও অসিম কুমার স্যার। কিভাবে কত টাকা দিচ্ছে আমি জানিনা। কাউকে ৪৮০,৪২০ বা ৩৮০ করে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে আলহাজ্ব মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল মোস্তফা সাঈদ সাংবাদিকদের জানান,ফরম ফিলাপ ও কেন্দ্র ফিস দুইটা আলাদা বিষয়। কলেজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১০% কর্তন করে ফেরত দেওয়া হবে। মার্কসিট ফেরত দিতে টাকা নেওয়ার ব্যাপারের অভিযোগ সত্য নয়। প্রশংসাপত্র দিতে ১০০-১৩০ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে। কলেজের সিদ্ধান্তে টাকা কর্তন করা হয়েছে বলেও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ কিছুই জানেন না এই বিষয়ে। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, আমি কিছুই জানিনা। প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি। টাকা কর্তন ও এসএসসির মার্কসিট ফেরতের টাকা নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন,আমরা হিসাব নিকাশ করে ছাত্র-ছাত্রীদের এসএমএস করেছি। এই টাকায় তারা ফেরত পাবে এবং কলেজ থেকে নিয়ে নেবে। আর পরীক্ষা সেন্টার খরচসহ যাবতীয় খরচ হিসাব করেই আমরা এসএমএস দিয়েছি। এসএমএস দেওয়া অংকের চেয়ে যদি কোন প্রতিষ্ঠান টাকা কম দেয় তবে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান মহোদয়কে পত্র দেব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান,কলেজের অধ্যক্ষ প্রতিবছর ফরম ফিলাপ,কলেজ উন্নয়নসহ বিভিন্ন নিয়োগে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে।
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সময় কলেজের কেনা জমির দাম ছিল ২-৫ হাজার টাকা শতক। সেই জমি তিনি পরবর্তীতে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত শতক দেখিয়েছেন।কলেজের শিক্ষকদের টিউশন ফিসও তিনি আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।তাদের অভিযোগ প্রতিবছর ফরম ফিলাপের সময় এভাবে লাখ লাখ টাকা এদিক ওদিক করেছেন। এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিন্সিপাল বিএনপি থেকে ১১ দশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। তার নামে নাশকতার একাধিক মামলা ঝিনাইদহ আদালতে চলমান রয়েছে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও এমপি মশিউর রহমানের সাথে কয়েকটা মামলায় তিনি আসামি রয়েছেন।তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে ডিগ্রী সেকশনে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিকে ৫ বছর পরে মাধ্যমিক সেকশনে নিয়োগ দিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।