করোনা অতিমারির তাণ্ডবে অসহায় অবস্থা গোটা মানব জাতির। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত চলছে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র ভ্যাকসিনই পারে এই বিপদ থেকে আমাদের বাঁচাতে। সরকার থেকেও দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এবার গর্ভবতী মহিলাদেরও কোভিড টিকা দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গাইডলাইনে কী বলা হয়েছে।
১) বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেই অ্যাসিম্পটোম্যাটিক বা হালকা উপসর্গ দেখা যায়। তবে তাদের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে পারে এবং এটি ভ্রূণকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ-সহ সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
২) স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় কোভিডের সংক্রমণ যাতে মহিলাদের ঝুঁকিতে না ফেলে তার জন্যই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
৩) স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, এখনও পর্যন্ত দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ করোনা সংক্রমিত গর্ভবতী মহিলার হাসপাতালে ভর্তির কোনও প্রয়োজন হয়নি। বাড়িতে যাথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমেই তাঁরা সেরে উঠেছেন। তবে অনেকেরই স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে পারে।
৪) সিম্পটোম্যাটিক গর্ভবতী মহিলাদের একাধিক গুরুতর রোগের মোকাবিলা করতে হয় এবং তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য রোগীদের মতো গর্ভবতী মহিলাদেরও হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন আছে।
৫) উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলত্ব, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী, আগে এক বা একাধিক রোগের ইতিহাস রয়েছে – এমন গর্ভবতী মহিলারা কোভিডের কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
৬) কোভিডে আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ নবজাতক জন্মের সময় ভাল অবস্থাতেই ছিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায় করোনা সংক্রমণ অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। শিশুর ওজন ২.৫ কেজিরও কম হতে পারে এবং বিরল পরিস্থিতিতে বাচ্চা জন্মের আগেই মারা যেতে পারে।
৭) কোনও মহিলার বয়স যদি ৩৫ বছরের বেশি হয়, তিনি মোটা হন, আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা থাকে, রক্ত জমাট বাঁধার মতো ইতিহাস থাকে, তাহলে সেই মহিলাদের ভাইরাস সংক্রমণের পরে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
৮) গর্ভাবস্থায় কোনও মহিলা কোভিডে আক্রান্ত হলে, প্রসবের পরপরই তাকে টিকা দেওয়া উচিত।
৯) মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যে ভ্যাকসিনগুলি রয়েছে সেগুলি নিরাপদ এবং ভ্যাকসিন গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করে। তবে ভ্যাকসিনের হালকা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১-৩ দিন হালকা জ্বর, ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, অস্বস্তি বোধ হতে পারে।
১০) বিরল ক্ষেত্রে, গর্ভবতী মহিলারা কোভিড টিকা নেওয়ার পরে ২০ দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলির কয়েকটি অনুভব করতে পারেন, এর দিকে সঙ্গে সঙ্গে নজর দেওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সমস্ত প্রেগনেন্ট মহিলাদের কো-উইন পোর্টালে রেজিস্টার করার পরামর্শ দিয়েছে। গর্ভবতী মহিলা ও তার পরিবারের সদস্যদেরও ডবল মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব ও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রক।