চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়েপড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে সারাবিশ্ব। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে একদিনেই আরও ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৪ জনে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ২ হাজার ৯৮৭ জন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ একাধিক আন্তজার্তিক গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, বুধবার মৃত ৭০ জনের সবাই হুবেই প্রদেশের। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে ২৭ হাজার ৩৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। চীনসহ সারা বিশ্বে এ সংখ্যা ২৭ হাজার ৬০২ জন। বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হুবেইতে ১৪ হাজার ৩১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭৫৬ জনের অবস্থা গুরুতর।
চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছে দুজন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।
এদিকে, চীনে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সং ইংজি নামে একজন চিকিৎসক। ১০ দিনের নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর হঠাৎ হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান ২৭ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকরী ওষুধ নিয়ে চীনা গবেষকদের দাবি উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এর টিকা আবিষ্কার নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমের দাবিও নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচও বলছে, এখন পর্যন্ত এর কোনো বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। ডব্লিউএইচও এর মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেন, ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর কোনো বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি নেই।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ২৪টি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯ হাজার । করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
প্রাণ সংহারক এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বাড়তে থাকার মধ্যে চীনের একটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই রোগের চিকিৎসার ওষুধ পেয়েছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজে একদল গবেষক দাবি করেন, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে ‘বিশেষ অগ্রগতি’ পেয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি না হওয়ায় আপাতত নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হল, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
আর হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীর মধ্যে যে উপসর্গগুলো আছে, সেগুলো সারাতেই মূলত চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে চেষ্টা চালাতে থাকে।