আসন্ন অষ্ঠম ধাপে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। প্রতিক বরাদ্দের পরপরই নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে লাঠি-সোটা নিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার প্রচারনায় অংশ নেয়া বন্ধ রাখা সহ হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র (মোটর সাইকেল প্রতিক) চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন বিশ্বাস।
জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারী ৫ম ধাপে শৈলকুপায় ১২ টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয় ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এসময় বাকি থাকে নিত্যানন্দপুর ও মনোহরপুর ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম। তবে ৬ষ্ঠ ধাপে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারী এই দুটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মঙ্গলবার ২৫ জানুয়ারী প্রতিক বরাদ্ধের পর বিকালে নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যানের সমর্থকরা লাঠি সোটা, বৈঠা নিয়ে গোপালপুর গ্রামে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী সমর্থক ও সাধারন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সেসময় নৌকার বিপক্ষে কাজ করলে হাত পা ভেঙে ফেলা সহ নির্বাচনের পর বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, প্রতিক বরাদ্ধের পরপরই নৌকার প্রার্থী মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে এলাকায় সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। মোটরসাইকেল প্রতিকের পক্ষে ভোট করতে কেউ মাঠে নামলে তাদের হাত-পা ভেঙ্গে ফেলাসহ বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাটের হুমকিও দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, গোপালপুর গ্রামের সামাজিক মাতব্বর নেকবার হোসেন ও তার কর্মী আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে গিয়ে তারা হুমকি ধামকি দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি সঠিক বিচার চেয়ে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, কিছু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা গোপালপুর গ্রামে গিয়েছিল। নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় কিছু মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। গ্রামের ভোটাররা কেউ কেউ বলছে আনারস ও মোটর সাইকেল প্রতিকে ভোট দেব। এ জন্য তারা হুমকি দিছে যেন নৌকার বাইরে কেউ কাজ না করে, ভোট না দেয়। এর বেশী কিছু না। তবে ভবিষ্যতে আর করবে না।
তবে অভিযোগের বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস জানান, আমার কোন নেতাকর্মী নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে যায়নি। কাউকে ভয়ভীতি দেখায়নি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা।
গোপালপুর গ্রামের সাধারন ভোটাররা জানান, বিকালে চাপের দোকানে বসেছিলাম। এমন সময় নৌকার শ্লোগান দিতে দিতে ২০/২৫ জন এসে আমাদের ভয় দেখায় যেন নৌকার বিপক্ষে কাজ না করি।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ জানান, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন বিশ্বাসের কাছ থেকে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনের জন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে সে চিঠি পায়নি। এই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের চিঠি পেলে তাকে এবং থানাকে অভিযোগপত্রটি ফরোয়ার্ডিং দেব আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, শৈলকুপা উপজেলায় সদ্য শেষ হওয়া ৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সারুটিয়া ইউনিয়নেই প্রাণ হারিয়েছে ৫ জন।